বিদেশিরা দেশের বড় বড় প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে চায়
স্টাফ রিপোর্টার, আউটলুবাংলা ডটকম

বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরকারের বড়-বড় প্রজেক্টে স্বল্প সুদে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা পাওয়ার প্লান্ট এবং ইনফ্রাচক্ট্রাচারেও আসতে আগ্রহী। তবে তারা শর্টটামে নয়, লংটার্মে বিনিয়োগে আসতে চায় বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁও অবস্থিত বিএসইসির সম্মেলন কক্ষে রোড-শো পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী বাজেটে (২০২১-২২) শেয়ারবাজারের জন্য ৮টি প্রস্তাবনা রাখা হবে। এরমধ্যে উল্লেখ্য বিষয়গুলো হচ্ছে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে করপোরেট কর-এ অতালিকাভুক্তি কোম্পানির সাথে সর্বনিম্ন ১৫% ব্যবধান। মার্জিন ঋণের সুদহার ১২% থেকে আরো কমিয়ে আনা। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর কমানো। দ্বৈত কর প্রত্যাহারের বিষয়। আইসিবিকে পূনর্গঠনের জন্য ফান্ডসহ আরো কিছু ছোটখাটো বিষয় মিলিয়ে ৮টি প্রস্তাব থাকবে।
গত বাজেটের (২০২০-২১) প্রস্তাব হয়ে যাওয়ার পরে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তারপরও আমরা খুব জোর দিয়ে দুটি বিষয়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলাম। এবার বাজেটের আগে প্রস্তাবের অনেক সময় পেয়েছি। আশা করছি প্রস্তাবনার অধিকাংশ বিষয়ে পাস হবে। ৮টি বিষয়ের মধ্যে থেকে যদি ৫টি বিষয়েও অনুমোদন হয়, তবে আমরা মনে করবো অগ্রসর হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা রোড-শো’তে আমাদের ইকোনোমিক ইন্ট্রোডিউস তুলে ধরলাম, আমরা কোথায় আছি টোটাল তথ্য প্রবাহ। কিছু কিছু জায়গায় ওরা আমাদের অনেক প্রশ্ন করেছেন, অনেক কিছু জানল এবং সামনাসামনি অনেক কিছু শোনার পরে ওরা ডিসিশন নিল এখন ওরা কি করবে। এখন আমাদের প্রত্যেক দিন মেইল আসে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করতে চায়। সেখানে কি কি কারেকশন দরকার সেটার বিষয়ে ওরা সাজেশন দেয়।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আমাদের যে প্রজেক্টগুলো আসছে সেগুলোর সাইজ ৫০০ কোটি, হাজার কোটি, দুই হাজার কোটি, চার হাজার কোটি এরকম বিরাট-বিরাট সাইজ। শুধু ইক্যুইটি মার্কেট দিয়ে এটার কোনো সলিউশন দেয়া সম্ভব না বলেই আমার বন্ডের কাজ করছি। বন্ডের মাধ্যমে একমাত্র আমাদের এই সলিউশন দেয়া সম্ভব। দেখা গেছে, বন্ডের কনভেনশনাল বন্ড এবং সুক্কুক মার্কেটে ট্রিলিয়ন ডলারের উপর আছে। এবং তাদের বিনিয়োগের জায়গা তারা খুঁজে পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা যখন এই প্রেজেন্টেশনটা করলাম, প্রেজেন্টেশনের পরে এরা প্রত্যেকেই আমাদের সাথে আলাদা আলাদা মিটিং করেছে। প্রত্যেকটা বড় বড় ইনভেস্টর। এখানে ওয়ার্ল্ডের সব নাম করা যাদের সাত ট্রিলিয়ন, তিন ট্রিলিয়ন। তারা ভালো জায়গা খুঁজছে কোথায় ইনভেস্ট করতে পারে। তাদের দেশে বিনিয়োগ করে তারা তেমন কোনো রিটার্ন পাচ্ছে না। এবং এই রেটিংয়ে যেসব দেশ সেসব দেশেই তারা বিনিয়োগ করে। এছাড়া বাংলাদেশের যে ভবিষ্যত আমরা দেখতে পাচ্ছি সামনের দিনগুলোতে আমাদের বিরাট ভূমিকা রাখতে হবে।
বাংলাদেশের প্রতি বিদেশিদের একটা নেগেটিভ ভাবমূর্তি ছিল উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আগে তারা আমাদের নিয়ে কেমন একটা ভাবতো। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি দেশের ঠিক পজিশনটা সবার কাছে তুলে ধরতে। সেজন্যই আমরা দুবাইতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে বাংলাদেশর সঠিক ডেটা তুলে ধরলাম। তারা আমাদের ডেটা দেখে অবাক হয়েছে। তারা জনতে চেয়েছে আমার ঠিক বলেছি কিনা, আমরা বলেছি এগুলো সব সঠিক। কোথাও তোমাদের সন্দেহ থাকলে গুগল সার্চ করে দেখতে পার। তখন তারা বিশ্বাস করা শুরু করলো। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে দুইবাইতে অবস্থানরত দুই তিন জন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বলল, আমরা এখানে খুব সম্মান পাচ্ছি। যখন কোনো কাজে ব্যাংকে যাই তারা আমাদের সম্মানের চোখে দেখে। আগের মতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না। এভাবেই আমাদের ভাবমূর্তিটা আস্তে আস্তে উজ্জল হবে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে নেগেটিভ প্রপাগান্ডাই করে গেছে সারাজীবন এবং এখনো। আমাদের ভালোটা কেউ বলি না, খারাপটাই খুঁজে দেখি। এসব কারণে আমাদের এই রোড শোটা বাংলাদেশের প্রপার তথ্যচিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে মনে করি যে বিদেশে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রপার তথ্যচিত্র উঠে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা যদি দুবাই, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, হংকং বা সিঙ্গাপুর এসব জায়গায় যদি বাংলাদেশের সঠিক তথ্য মানুষের কাছে, বিয়োগকারীর কাছে, বিদেশের সংবাদপত্র বা বিদেশের ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরতে পারি তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে একটা নেতিবাচক মনোভাব অনেক বছর ধরে রয়ে গেছে সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদেরকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখবে। এখনো তারা ভাবে আমরা বোধহয় মানুষের ডোনেশনের উপর চলি। আমাদের যে এখন ডোনেশন লাগে না সেটা তারা জানে না।